প্রাকৃতিক দুর্যোগ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো একপ্রকারের প্রাকৃতিক ঘটনা, যাতে মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি হয়ে থাকে। যদিও তা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবেই ঘটে থাকে, তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কাজ-কর্মের প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এরকম ঘটনা ঘটে থাকে। সাধারণ ভাষ্যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম
২০০৯ সালে ম্যারিল্যান্ডে একটি তুষারঝড়
সুনামি
কোনো বিশাল জলক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্রে, ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সেখানটায় ভুত্বকে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবে উপরস্থিত জলক্ষেত্র ফুঁসে উঠে বিপুল ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। এই ঢেউ প্রবল বিক্রমে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসে এবং স্থলভাগে আছড়ে পড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। সাধারণত ভূমিকম্পের পরে সুনামি ঘটে থাকে। তবে ভূমিকম্পের পর যে সুনামি হবেই এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না বলেই উপকূলীয় এলাকায় ভূমিকম্প সংঘটিত হলেই উপকূলীয় জনসাধারণ এব্যাপারে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে পারে না। আর ভূমিকম্প সংঘটিত হলেই তারা নিজেদের আবাস ত্যাগ করতেও পারে না। ফলে উচ্চমাত্রার ভূকম্পনের পরে হওয়া সুনামিতে সাধারণত জনক্ষয় রোধ করা যায়, কিন্তু কোনো সুনামিতেই স্থলভাগের স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যায় না।
স্থল-ঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডো
১৫৮৪ সালে ঘুর্ণিঝড়ে বাকেরগঞ্জ জেলায় ২ লাখ মানুষসহ অসংখ্য গবাদি পশু প্রাণ হরায়। ১৮২২ সালের ৬জুন সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ে ১০হাজার ব্যক্তি প্রাণ হারায়। ১৮৬৯ সালের ১৬এপ্রিল ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৮৭২ সালে কক্সবাজারে ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর আঘাত হানে ভোলা জেলায়। এই সময় পানির উচ্চতা ছিল ৩ থেকে ১৫ মিটার। এতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০হাজারের মত। ১৮৯৫ সালে অক্টোবর মাসে সুন্দরবন ও বাগেরহাট জেলায় জলোচ্ছ্বাসে ও ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৮৯৭ সালে ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের কতুবদিয়া দ্বীপে আঘাত আনে। প্রান হারায় অসংখ্য লোক। ১৮৯৮ সালে টেফনাফে ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯০১ সালে সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯০৯ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে ও কক্সবাজারে ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৯৭ সালের মে মাসে সুন্দরবনে ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯১৯ সালে বরিশালে জলোচ্ছ্বাসে ও ঘুর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজার। ১৯২৬ সালের মে মাসে বরিশালে ও নোয়াখাীরতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজার ৫ জনে মত। ১৯৫৮ সালের ২১ থেকে ২৪ অক্টোম্বর নোয়াখালী, ২০ নভেম্বর পটুয়াখালী ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৬০ সালে সুন্দরবনে আঘাত হানে। এখানে মৃতে সংখ্যা দাঁড়ায় তিন হাজার। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোম্বর আঘাত হানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, উপকূলিয় এলাকায়। ১৯৬১ সালে বেশ কয়েকবার দেশের বিভিন্ন স্থানেজলোচ্ছ্বাসে বহুলোক প্রাণ হারায়। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরগুনা ও ভোলাসহ দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় গোর্কি। গোর্কির আঘাতে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। দেড়শ’ মাইল বেগের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ও ২০ থেকে ৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে গোটা উপকূলীয় এলাকা মৃতপুরীতে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৪ থেকে ৮ মিটার উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের ১৫ হাজার ব্যক্তি প্রাণ হারায়। ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে হঠাৎ টর্ণেডোয় শত শত ট্রালার, জেলে মাঝি মাল্লা প্রাণ হারায়। ২০০৭ সালে সিডরে সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এ সময় মৃত গলিত লাশ ভাসতে দেখা গেছে। ২০০৯ সালের ২৫ মে। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা।লন্ডভন্ড করে দেয় এ অঞ্চলের হাজার হাজার বসত-ভিটা, আবাদিজমি। সরকারি হিসেবেই এতে প্রাণ যায় তিন শো ৩২ জনের। ২০১৩ সালের ১৬ মেবৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরের ঘুর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের উপকূলস্থ অঞ্চলসমূহে
ভূমিকম্প
ভূত্বকের নিচে টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে ভূপৃষ্ঠে যে কম্পন অনুভূত হয়, তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্প মাপার ক্ষেত্রে সাধারণত বিশ্বব্যাপী রিখটার স্কেল ব্যবহৃত হয়, তবে সংশোধিত মার্কলি স্কেলও স্বীকৃত। রিখটার স্কেলে ১ মাত্রার ভূমিকম্প হলো সর্বনিম্ন মাত্রা, আর সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ১০। পৃথিবীর ইতিহাসে মারাত্মক সব ভূমিকম্প নথিভুক্ত করা হয়েছে। টেকটনিক প্লেট ছাড়াও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতেও ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের উপরে থাকা স্থাপনা কম্পন সহ্য করতে না পারলে ভেঙ্গে পড়ে। সমুদ্রে ভূকম্পন হলে পানিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে, ফলে সংঘটিত হয় সুনামি
আরও দেখুন...